রমজান মাসে কতটা আল্লাহমুখী হলাম
ধর্মপাতা: মাওলানা মাকসুদুর রহমান : রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের মাস রমজান। এই মাসের পূর্ণ রহমত ও বরকত পেতে হলে যথার্থরূপে সিয়াম সাধনার মাধ্যমে আল্লাহভীতি অর্জন করতে হবে। আর আল্লাহভীতির চূড়ান্ত ফলাফল হলো বান্দা আল্লাহ অভিমুখী হবে। পাপ-পঙ্কিলতা থেকে মুক্ত হয়ে নিজেকে পুরোপুরি আল্লাহর কাছে সমর্পণ করবে। বরকতপূর্ণ এই মাস বিদায়ের পথে তাই একবার হিসাব মিলিয়ে দেখা দরকার আমরা কতটা আল্লাহভীতি অর্জন করতে পারলাম এবং আল্লাহমুখী হতে পারলাম।
সাওম পালন ও আল্লাহমুখী হওয়া
আরবি সাওমের অর্থ বিরত থাকা। শরিয়তের পরিভাষায় সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত নিয়ত সহকারে পানাহার এবং যৌনাচার থেকে বিরত থাকাকে সাওম বলে। (ফাতাওয়ায়ে শামি : ২/৯২)
সাওম সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি মিথ্যা বলা ও তদানুযায়ী আমল করা বর্জন করেনি তার এ পানাহার পরিত্যাগ করায় আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৮০৪)
রোজা সম্পর্কে এমন আরো অনেক হাদিস রয়েছে। এসব হাদিস পর্যালোচনা করলে স্পষ্ট হয় যে, সাওম শব্দের অন্তর্নিহিত বিরত থাকার অর্থ অত্যন্ত ব্যাপক ও তাৎপর্যময়। যা আল্লাহর সব আদেশ পালন ও নিষেধ থেকে বিরত থাকার অর্থ অন্তর্ভুক্ত করে।
এ ছাড়া সুরা বাকারার ১৮৩ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তাকওয়া বা আল্লাহভীতিকে রোজা পালনের উদ্দেশ্য হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তাকওয়ার আভিধানিক অর্থ বেঁচে থাকা আর পরিভাষায় তাকওয়া হলো আল্লাহর আদেশ ও নিষেধের যথাযথ পরিপালনের মাধ্যমে আল্লাহর রাগ ও অসন্তুষ্টি থেকে বেঁচে থাকা। অতএব রোজার উদ্দেশ্য হলো তাকওয়া অর্জন তথা আল্লাহর অসন্তুষ্টি ও রাগের ভয়ে তাঁর আদেশের বাস্তবায়ন ও নিষেধকৃত বিষয়াবলি থেকে বেঁচে থাকার প্রশিক্ষণ গ্রহণ। রোজার মাধ্যমে একজন বান্দা নিজেকে আল্লাহর কাছে পুরোপুরি সমর্পণ করতে শিখবে এবং প্রবৃত্তির দাসত্ব থেকে আল্লাহর দিকে ফিরে আসবে।
আল্লাহমুখী হতে কতটা যত্নশীল আমরা?
বান্দাকে আল্লাহর দিকে ফেরাতে আল্লাহ তাকে বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষার ভেতর দিয়ে নেন। যেন সে নিজের ক্ষুদ্রত্ব, অসহায়ত্ব, অপারগতা বুঝতে পারে এবং আল্লাহর মাহাত্ম্য, বড়ত্ব ও অসীম ক্ষমতার পরিধি উপলব্ধি করে তাঁর দিকে ফিরে আসে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয়ই আমি তোমাদের কিছু ভয় ও ক্ষুধা, জীবন ও সম্পদ এবং ফসলের ক্ষতির মাধ্যমে পরীক্ষা করব। আপনি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দিন! তারাই ধৈর্যশীল যারা বিপদের সময় বলে আমরা তো আল্লাহরই এবং নিশ্চিতভাবে তারই দিকে ফিরে যাব।’ (সুরা বাকারা, আয়াত ১৫৫-১৫৬)
বর্তমানে পুরো পৃথিবী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে ভয়াবহ এক বিপর্যয়ের মুখোমুখি। মানুষ তাদের জীবন, জীবিকা, সংসার, সম্পদ ও পরিবার নিয়ে সীমাহীন উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছে। যা একজন মুমিনকে আল্লাহমুখী করে তোলে। বৈশ্বিক এই বিপর্যয় ও রমজানের দাবি হলো, মুমিন নিজেকে পুরোপুরি আল্লাহর কাছে সমর্পণ করবে। কিন্তু আমরা কি তার পরও আল্লাহর দিকে ফিরে এসেছি? তাওবা করছি? নাকি আগে যেভাবে চলতাম সেভাবেই চলছি? আর শুধু রমজানের আনুষ্ঠানিকতা পালন করছি? সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই এখনো নিজের পাপ ও পাপাচারের প্রচারণায় মত্ত, মিথ্যা ছাড়ছি না, অন্যের সম্পদ আত্মসাৎ করছি, গালি দিচ্ছি, গিবত করছি, যে অশ্লীলতায় এতদিন ডুবে ছিলাম তা এখনো পরিহার করছি না। এত মৃত্যু, ভয় ও বিপর্যয়ের মধ্যেও যদি মানুষ আল্লাহমুখী হতে না পারে, তবে তাদের কে রক্ষা করবে আল্লাহর ক্রোধ ও শাস্তি থেকে। মনে রাখা উচিত, আমরা হয়তো ভাইরাস থেকে বেঁচে যাব কিন্তু মৃত্যু থেকে তো বাঁচতে পারব না। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা যেখানেই থাকো না কেন; মৃত্যু তোমাদের পাকড়াও করবেই। যদি তোমরা সুদৃঢ় দুর্গের ভেতরেও অবস্থান করো।’ (সুরা নিসা, আয়াত : ৭৮)
তাই আসুন! আল্লাহর কাছে ফিরে যাই এবং নিষ্ঠার সঙ্গে তাওবা করি। আল্লাহ আমাদের তাওফিক দিন। আমিন।
লেখক : সুপারিনটেনডেন্ট, হাবিব লাইলী মাদরাসা, পশ্চিম টুটপাড়া, খুলনা।