রাস্তায় পরিবহন চলাচল ও মানুষের অবাধ ঘোরাফেরা বন্ধে কঠোর হচ্ছে সরকার
এক্সক্লুসিভ: দিন দিন দেশে করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। কিন্তু ঈদকে সামনে রেখে রাস্তায় পরিবহন চলাচল ও মানুষের অবাধ ঘোরাফেরা বেড়ে গেছে। ফলে আরো ব্যাপকভাবে করোনা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কাও বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে রাস্তায় পরিবহন চলাচল ও মানুষের অবাধ ঘোরাফেরা বন্ধে কঠোর হচ্ছে সরকার। সেই প্রেক্ষিতে ঈদের আগে গণপরিবহন চালুর কোনো সম্ভাবনাও নেই।
চলতি মাসে দেশজুড়ে নৌ, সড়ক ও রেলপথ থেকে শুরু করে আকাশপথেও যাত্রী পরিবহন বন্ধ থাকবে। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসলে যানবাহন চালুর বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিতে পারে সরকার। মূলত বিশে^র বিভিন্ন দেশের মতো লকডাউন শিথিল করতে গিয়েই সর্বোচ্চ আক্রান্তের দেশগুলোর দিকে ধাবিত হচ্ছে বাংলাদেশ। এমন অবস্থায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকার আবারো কঠোর হওয়ার পথে হাঁটার কথা ভাবছে।
সেজন্যই ঈদের ছুটিতে গণপরিবহন বন্ধের পাশাপাশি ব্যক্তিগত যান চলাচলেও কঠোর হবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। অর্থাৎ সামনের দিনগুলোতে রাস্তা পুরোপুরি ফাঁকা রেখে মানুষকে ঘরে রাখার চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে। বিশ^স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শই হলো করোনা নির্মূল করতে হলে ঘরে থাকার বিকল্প নেই। প্রশাসন সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে ঈদকে সামনে রেখে সীমিত পর্যায়ে গণপরিবহন চালুর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। ওই লক্ষ্যে পরিবহন মালিক সমিতির সঙ্গে বেশ কয়েকদফা দেন দরবারও করা হয়। কিন্তু ১০ মে থেকে দোকানপাট, শপিংমল, মার্কেট খুলে দেয়ায় দেদার করোনার রোগী বাড়ছে। রাস্তায় বেড়েছে যান ও মানুষের ভিড়। সড়ক, মহাসড়ক থেকে শুরু করে ফেরিঘাটে ঢাকামুখি মানুষের ভিড়ে বেড়েছে মৃত্যুর পরিমাণও। এমন পরিস্থিতিতে পরিবহন চালুর সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে সরকারের সামনে কঠোর হওয়া ছাড়া বিকল্প কিছু নেই। ফলে মানুষের অবাধ ঘোরাফেরা বন্ধে কঠোর অবস্থান নিতে যাচ্ছে সরকার। ইতিমধ্যে বিভিন্ন জেলায় স্বাস্থ্যবিধি না মানার কারণে স্থানীয় প্রশাসন মার্কেট বন্ধ করে দিয়েছে। যে কোন সময় রাজধানী ঢাকাতেও ফের মার্কেট বন্ধের ঘোষণা আসতে পারে।
সূত্র জানায়, রাস্তায় মানুষের অবাধ চলাচল ঠেকান ও কোনভাবেই সাধারণ মানুষ যাতে এক উপজেলা থেকে অন্য উপজেলা, এক জেলা থেকে অন্য জেলায় চলাচল করতে না পারে সেজন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ করোনা ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে সাধারণ মানুষের অবাধ চলাচল নিষিদ্ধ করে আদেশ জারি করেছে। আদেশে বলা হয়েছে, আগামী ৩০ মে পর্যন্ত সাধারণ ছুটির সময়ে সড়কপথে গণপরিবহন, যাত্রীবাহী নৌযান ও রেল চলাচল এবং অভ্যন্তরীণ রুটে বিমান চলাচল বন্ধ থাকবে।
একইসঙ্গে মহাসড়কে মালবাহী ও জরুরি সেবায় নিয়োজিত যানবাহন ব্যতীত অন্যান্য যানবাহন কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের আদেশে আরো বলা হয়েছে, সাধারণ ছুটি এবং চলাচল নিষেধাজ্ঞাকালে এক জেলা থেকে অন্য জেলা বা এক উপজেলা থেকে অন্য উপজেলায় জনসাধারণের চলাচল কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত থাকবে। জেলা প্রশাসন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় এ নিয়ন্ত্রণ সতর্কভাবে বাস্তবায়ন করবে। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধকল্পে জনগণকে অবশ্যই ঘরে অবস্থান করতে হবে।
রাত ৮টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত অতীব জরুরি প্রয়োজন ছাড়া (প্রয়োজনীয় কেনাকাটা, ওষুধ কেনা, চিকিৎসা নেয়া, মৃতদেহ দাফন বা সৎকার করা, ইত্যাদি) কোনভাবেই বাড়ির বাইরে আসা যাবে না। সাধারণ ছুটি/নিষেধাজ্ঞাকালে সড়কপথে গণপরিবহন, যাত্রীবাহী নৌযান ও রেল চলাচল এবং অভ্যন্তরীণ রুটে বিমান চলাচল বন্ধ থাকবে। মহাসড়কে মালবাহী/জরুরি সেবায় নিয়োজিত যানবাহন ব্যতীত অন্যান্য যানবাহন কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
সূত্র আরো জানায়, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে ঈদের আগে লঞ্চ না চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। একইসঙ্গে নৌযান মালিকরাও সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঈদের আগে নৌযান চালাবেন না। তবে অনুমতি পেলে বাস মালিকরা তাদের বাস চালাতে রাজি থাকলেও এখন বলছেন, যেহেতু সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে গণপরিবহন চলবে না, তারাও সরকারের সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত পোষণ করে এ সময় গণপরিবহন চালাবেন না। আর সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয় বলেছে, যেহেতু আগামী ৩০ মে পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে এবং সাধারণ ছুটিকালীন জনসাধারণের চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে, সেহেতু গণপরিবহন চলার অনুমতি দেয়ার প্রশ্নই আসে না। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের পক্ষ থেকে ৩০ মে পর্যন্ত গণপরিবহন বন্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। আর পণ্যবাহী পরিবহনে যাত্রী পরিবহন না করতে বলা হয়েছে। আর স্বাস্থ্যবিধি মেনে লঞ্চ চালানো সম্ভব হবে বলে লঞ্চ মালিকরাও লঞ্চ চালাতে রাজি নয়। তাছাড়া সরকার সাধারণ ছুটিকালীন মানুষের চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।
এদিকে এ প্রসঙ্গে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন জানিয়েছেন, যেহেতু সরকার সব ধরনের যাত্রী পরিবহন চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে, সেহেতু রেল চলছে না।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, ঈদের আগের ৪ দিন, ঈদের দিন এবং ঈদের পরের ২ দিন- এই ৭ দিন সব ধরনের যানবাহন চলাচলে কঠোরতা অবলম্বন করা হবে। এই ৭ দিন প্রাইভেটকারসহ অন্যান্য যানবাহনও চলাচল করতে দেয়া হবে না। যে যেখানে অবস্থান করছেন, এবার সেখানেই তাকে ঈদ করতে হবে। এ বিষয়ে সরকারি আদেশে বলা হয়েছে, সাধারণ ছুটি/চলাচলে নিষেধাজ্ঞার মধ্যে কেউ কর্মস্থল ত্যাগ করতে পারবে না।