লাহোরে সন্ত্রাসী হামলা বদলে দিয়েছিল সাঙ্গাকারার জীবন দর্শন
স্পোর্টস: “বাসের ভেতর যেন নরক নেমে এসেছিল”, ১১ বছর পরও সেই ঘটনার কথা বলতে গেলে এটাই সবার আগে মনে পড়ে কুমার সাঙ্গাকারার। লাহোরে শ্রীলঙ্কা দলের বাসে ওই সন্ত্রাসী হামলা বদলে দিয়েছিল তার জীবন দর্শন। ২০০৯ সালের ৩ জুন। দ্বিতীয় টেস্টের তৃতীয় দিনের খেলার জন্য লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে যাচ্ছিল সফরকারীরা। মাঝপথে বাসকে লক্ষ্য করে সন্ত্রাসী হামলায় পুলিশসহ প্রাণ হারান আট পাকিস্তানী।
আহত হন ছয় লঙ্কান ক্রিকেটার। সম্প্রতি স্কাই স্পোর্টস ক্রিকেটে মাইক আথারটনের সঙ্গে আলাপচারিতায় ১১ বছর আগের সেই দিনে ফিরে যান সাঙ্গাকারা। যে ঘটনা মনে পড়লে এখনও শিউরে ওঠেন লঙ্কান গ্রেট। প্রথম ইনিংসে ছয়শ ছাড়ানো সংগ্রহ গড়েছিল শ্রীলঙ্কা। দ্বিতীয় দিন শেষে ১ উইকেটে ১১০ রান করেছিল পাকিস্তান। তৃতীয় দিনের খেলার জন্য মাঠে যাওয়ার সময় সাঙ্গাকারারা ভাবছিলেন, কি করবেন সন্ধ্যায়।
“সামনে বসে থাকা আমাদের একজন পেসার বলছিল, ‘উইকেট একেবারেই ফ্ল্যাট। আমি স্ট্রেস ফ্র্যাকচারের শিকার হতে যাচ্ছি। আশা করি, একটা বোমা ফাটবে, তাতে আমরা বাড়ি ফিরে যেতে পারব।’ এর ২০ সেকেন্ড পর এটা ঘটলোৃ।” “আমরা গুলির শব্দ শুনি, ভেবেছিলাম বোধহয় আতশবাজির শব্দ। আমাদের একজন সামনে বসে ছিল, সে বলেছিল ‘নিচু হও, ওরা বাসে গুলি করছে’।” “সেখানে যেন নরক নেমে এসেছিল। আমরা বাসের আইলে লুকাই। যেন একে অন্যের ওপরে ছিল সে সময়।
এরপর গুলি শুরু হলো। যতবার পেরেছে ওরা বাসে গুলি করেছে। গ্রেনেড ছুড়েছে, একটা রকেট লঞ্চারও ব্যবহার ছুড়েছিল। এবং কোনো কারণে, আমি জানি না কেন, আমরা বেঁচে যাই।” অনেকের শরীর থেকে রক্ত পড়ছিল। কার কি অবস্থা বোঝার উপায় ছিল না। দমবন্ধ করা সেই পরিস্থিতির একটা ধারণা দিলেন সাঙ্গাকারা। “থিলান সামারাবিরা আহত হয়েছিল। আমার কাঁধে অনেক শার্পনেল আঘাত করেছিল। অজন্তা মেন্ডিস আহত হয়েছিল। থারাঙ্গা পারানাভিতানার বুক থেকে রক্ত পড়ছিল।
গুলি লেগেছে জানিয়ে লুটিয়ে পড়েছিল সে। আমরা বাস জুড়ে শুনছিলাম, আহ, ওহ শব্দ।” সাঙ্গাকারা জানান হামলার আগে শ্রীলঙ্কা দল বাড়তি নিরাপত্তা ও খেলোয়াড়দের জন্য বীমার অনুরোধ করেছিল। পিসিবি সেই অনুরোধ রাখেনি। “ওরা বাস ড্রাইভারকে গুলি করার চেষ্টা করেছিল। একটুর জন্য তার গায়ে লাগেনি। সম্ভবত সে বেঁচে ছিল আর চালিয়ে নিতে পেরেছিল, সেদিন আমরা বেঁচে গিয়েছিলাম।
অন্যান্য দিন মাঠে যাওয়ার সরু গেট পার হতে প্রায় চারবার চেষ্টা করতে হত, সেদিন একবারের চেষ্টাতেই সোজা মাঠে নিয়ে গিয়েছিল।” “আমরা নিচে নামি। কোনো কারণে আমরা ভেবেছিলাম, পারানাভিতানা আর নেই। নিজের পিঠে হাত দিয়ে বলে, ‘আমার পিঠে কোনো ছিদ্র নেই। আমার ধারণা, আমি ঠিক আছি।’ সেও হেঁটে বাস থেকে নামে। থিলানের সারা গা রক্তে মাখামাখি ছিল। ও খুব বাজেভাবে গুলি খেয়েছিল। প্রথম অ্যাম্বুলেন্সে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরের অ্যাম্বুলেন্সে মেন্ডিস আর আমি যাওয়ার কথা ছিল।
পরে ওরা অ্যাম্বুলেন্স লক্ষ্য করে গুলি শুরু করল, তাই আমরা সেখানেই থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই।” একটু একটু করে স্বাভাবিক হতে থাকে পরিস্থিতি। সাঙ্গাকারারা তখন ভাবছিলেন, আমরাই কেন? “তিন-চার মিনিটে আমরা যে বিস্ময়ের মধ্য দিয়ে গিয়েছিলাম, লোকেদের এর মধ্য দিয়ে প্রতিদিন যেতে হয়, এনিয়ে অনেক কথা হয়েছিল।
এগুলো আমাদের একটা ব্যাপার বুঝতে সহায়তা করেছিল-আমরা নই কেন? আমাদের কি বিশেষ এমন বানিয়েছে যে, আমরা আক্রমণের মুখে পড়বো না বা এমন কিছুর ভেতর দিয়ে যাব না।”