শুরু হলো বিজয়ের মাস
ডেস্ক রিপোর্ট: আজ ১ ডিসেম্বর। বছর ঘুরে আবার ফিরে এলো গৌরবময় বিজয়ের মাস। আজকের দিনটিতেই সূচনা ঘটতে যাচ্ছে বাঙালীর কাক্সিক্ষত মুক্তি সংগ্রামের বিজয় অর্জনের মাস ডিসেম্বরের। পূর্তি হলো স্বাধীনতার ৪৭ বছর। ডিসেম্বর মাস রাষ্ট্র পাওয়ার মাস, কষ্ট পাওয়ার মাস। বাঙালি জাতির একটি নিজস্ব রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপরিচয়ে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার মাস ডিসেম্বর। পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও তার এ দেশীয় দোসরদের পরাস্ত করার মাস। আবার ৩০ লাখ মানুষ হারানোর দুঃসহ কষ্টের মাস। একাত্তরে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াকু বাঙালীর মুক্তিযুদ্ধ এ মাসে বিজয়ের সুমহান মর্যাদায় অভিষিক্ত হয়েছিল।
এবার ভিন্ন প্রেক্ষাপটে এসেছে বিজয়ের মাস। ইতোমধ্যে একাত্তরের স্বাধীনতাবিরোধী ও যুদ্ধাপরাধীদের বেশিরভাগের বিচার কাজ শেষ হয়েছে, একাত্তরের বাঘা বাঘা গণহত্যাকারী যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দড়িতে ঝুড়িয়ে মৃত্যুদ- কার্যকর করা হয়েছে। কারাগারের ফাঁসির অন্ধকার প্রকোষ্ঠে মৃত্যুর প্রহর গুনছে একাত্তরের কয়েক ঘাতক যুদ্ধাপরাধী। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সর্বোচ্চ দ-প্রাপ্ত ছয় যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি এ পর্যন্ত কার্যকর করা হয়েছে। তারা হলেন- কাদের মোল্লা, কামারুজ্জামান, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী, আলি আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, মতিউর রহমান নিজামী এবং মির কাশেম আলী। আরও অনেকের রায় কার্যকরের অপেক্ষায়। তাই এবারের বিজয়ের মাস শুরু হয়েছে ভিন্ন মাত্রায়। বহু কাক্সিক্ষত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শেষ করার মাধ্যমে গত ৪৪ বছরের লজ্জা ঘোচানোয় সারা জাতি এখন উদ্বেলিত।
মুক্তিযুদ্ধের অগ্নিঝরা সেসব দিনে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র যুগিয়েছিল মুক্তির লড়াইয়ের অনিঃশেষ প্রেরণা। সে সময়ের গানে গানে বিধৃত আছে লাঞ্ছিত-নিপীড়িত, মুক্তিপাগল সাড়ে সাত কোটি বাঙালীর প্রাণের উচ্ছ্বাস, ত্যাগ, লড়াই ও মুক্তির মন্ত্র। উনিশ শ’ একাত্তরে দীর্ঘ ন’টি মাস পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে বাঙালীর মৃত্যুপণ জনযুদ্ধ শেষে অর্জিত হয়েছিল প্রত্যাশিত বিজয়। লাখো শহীদের আত্মদান, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সাহসী অবদান, ত্যাগ এবং অসংখ্য মা-বোনের মহামূল্যবান সম্ভ্রমের বিনিময়ে বাংলাদেশ নিজের স্থায়ী আসন অর্জন করে নেয় বিশ্বমানচিত্রে। তাই কৃতজ্ঞ বাঙালি জাতি এই ডিসেম্বর মাসজুড়ে স্মরণ করবে লাখো শহীদানকে। তাঁদের অপূর্ণ স্বপ্ন এবং প্রত্যাশা বাস্তবায়নের শপথে নতুন করে উজ্জীবিত হবে।
জীবনের গভীরতম অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে ৪৫ বছর পার করা এ দেশের মানুষের কাছে এবারের ডিসেম্বর শুধু বছর-পরিক্রমায় আরও একটি মাস নয়; এবারের ডিসেম্বর নতুন ভাবনা ও চেতনা নিয়ে সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। যে দলটি নেতৃত্ব দিয়ে এ দেশটিকে স্বাধীন করেছিল, সেই ঐতিহ্যবাহী রাজনীতিক দল আওয়ামী লীগ এখন মহাবিজয় নিয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায়। সর্বত্রই এখন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নে দীপ্ত পথ চলা। তাই এবার নতুন ভাবনা স্বপ্ন আর বাস্তবতাকে পাশাপাশি দাঁড় করিয়ে নতুন করে সিদ্ধান্ত নেয়ার শপথ নিয়েই বাঙালি জাতি মাসব্যাপী উদযাপন করবে বিজয়ের মাস ডিসেম্বর।
স্বাধীনতা প্রিয় বাঙালি জাতি আজ নতুন আশায় বুক বেঁধেছে, ৩০ লাখ প্রাণের বিনিময়ে পাওয়া স্বাধীনতাকে অর্থপূর্ণ করে তুলতে দীর্ঘ পথচলায় দুর্নীতি-অপশাসন ও স্বাধীনতা বিরোধী সাম্প্রদায়িক অপশক্তির মতো হাজারও জঞ্জালে ভরে যাওয়া স্বপ্নের জাল ঝেড়ে পরিষ্কার করার সময় এসেছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রায় কার্যকরের মধ্যে দিয়ে জাতি অভিশাপমুক্ত হয়েছে। একাত্তরের ক্ষতগুলোকে সারিয়ে তোলা বা রোধ করার এখনই সময়। অচিরেই যুদ্ধাপরাধী ও স্বাধীনতাবিরোধীমুক্ত বাংলাদেশ দেখতেই এখন অধীর অপেক্ষা দেশের কোটি কোটি মানুষের।