শ্রীলঙ্কায় গণকবরে ২৩০টি কঙ্কাল
ডেস্ক: শ্রীলঙ্কায় চলতি বছরের শুরুর দিকে উত্তর পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর মান্নারে খোঁজ পাওয়া একটি গণকবরে ২৩০টিরও বেশি কঙ্কাল পাওয়া গেছে বলে বিশেষজ্ঞরা নিশ্চিত করেছেন। একে শ্রীলঙ্কার ‘সর্ববৃহৎ গণকবর’ হিসেবেও অ্যাখ্যা দিয়েছেন তারা।
এর আগে অগাস্টে এই গণকবরটি থেকে ৯০টি কঙ্কাল পাওয়ার কথা জানানো হয়েছিল, খবর বিবিসির। শ্রীলঙ্কায় তামিল বিচ্ছিন্নতাবাদী ও সরকারি বাহিনীর কয়েক দশকের গৃহযুদ্ধে অন্তত ২০ হাজার লোক নিখোঁজ হয়েছে বলে ভাষ্য মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলোর।
২০০৯ সালে সমাপ্ত হওয়া ২৬ বছরের ওই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য ও তামিল বিদ্রোহীসহ অন্তত এক লাখ মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে বলেও ধারণা বিশ্লেষকদের। চলতি বছরের শুরুর দিকে মান্নারের প্রধান বাস টার্মিনালের কাছে পুরনো একটি সমবায় গুদামের কাছে নতুন ভবনের নির্মাণকাজের খোঁড়াখুড়ির সময় শ্রমিকরা মানুষের দেহাবশেষ পেলে নতুন এ গণকবরটির সন্ধান পাওয়া যায়। পরে আদালত স্থানটিতে বিস্তৃত খননকাজের নির্দেশ দেয়। সেখান থেকেই এ ২৩০টি কঙ্কাল মেলে। তবে এ মৃতদেহগুলো কাদের এবং কিভাবে তাদের মৃত্যু হয়েছে তা স্পষ্ট হওয়া যায়নি। আমরা খুঁড়ে ২৩০টিরও বেশি কঙ্কাল পেয়েছি। আমার অভিজ্ঞতা বলে এটিই (শ্রীলঙ্কার) সবচেয়ে বড় গণকবর, বলেন খননকাজে নেতৃত্ব দেওয়া কেলানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ববিদ অধ্যাপক রাজ সোমাদেবা। গণকবরটি থেকে প্রত্নতত্ত্ববিদরা দেহাবশেষের পাশাপাশি চীনামাটির বাসন কোসন, সিরামিক ও ধাতব বস্তু এবং কিছু অলঙ্কারও্ুদ্ধার করেছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
হাড়গুলো ছড়ানো ছিটানো ছিল, যে কারণে মৃতদেহগুলোর কাঠামো বের করা কষ্টকর হয়ে পড়েছিল। কিছুকিছু হাড় পাওয়াও যায়নি, খুবই বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি, বিবিসিকে বলেন সোমাদেবা। তামিল অধ্যুষিত মান্নারে কয়েক দশকের গৃহযুদ্ধে কয়েক হাজার ব্যক্তি নিখোঁজ হয়েছেন বলে সেখানকার স্থানীয় নেতারা দাবি করছেন। সংঘাতের সময় মান্নার মূলত সরকারি বাহিনীর দখলে থাকলেও এর আশপাশের অংশের নিয়ন্ত্রণ ছিল তামিল বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হাতে। বছর দশেক আগে রক্তক্ষয়ী এক সংঘর্ষে শহরটির চারপাশের জেলাগুলো শত্রুমুক্ত করে লঙ্কান সেনাবাহিনী।
উদ্ধার মৃতদেহ ও কঙ্কালগুলো প্রথমে মান্নারের আদালতে স্থানান্তর করা হবে বলে জানিয়েছে বিবিসি; খননকাজের পর সেগুলোর কী হবে আদালতই পরে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাবে। আড়াই দশকের গৃহযুদ্ধের সমাপ্তি শেষে শ্রীলঙ্কায় একের পর এক গণককবরের সন্ধান পাওয়া যায়। হিন্দু মন্দির থিরুকেথেস্বরামের কাছে মান্নারের অন্যে একটি গণকবরে ২০১৪ সালে ৯৬টি মৃতদেহের খোঁজ মিলেছিল। চার বছর ধরে এ নিয়ে একটি মামলা চললেও এখন পর্যন্ত নিহতদের পরিচয় উদ্ধার করা যায়নি; জানা যায়নি কারা তাদের হত্যা করেছিল তাও। মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, গৃহযুদ্ধের সময় তামিল বিচ্ছিন্নতাবাদী ও সরকারি বাহিনী দুইপক্ষই নির্বিচারে বেসনামরিক নাগরিকদের হত্যা করেছিল। সরকারি বাহিনীগুলো শুরু থেকেই এ অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। মান্নারের গণকবরে উদ্ধার মৃতদেহগুলোর সঙ্গে তাদের সৈন্যদের কোনোধরনের সম্পৃক্ততার ইঙ্গিতও উড়িয়ে দিয়েছে কলম্বো।