সম্পাদকীয়–সুন্দরবন দস্যুমুক্ত ঘোষণা

সুন্দরবন শুধু বাংলাদেশেরই গর্ব নয়, এটি বিশ্ব ঐতিহ্যেরও অংশ। পৃথিবীতে নোনা পানির এত বিশাল বন আর নেই। এর অংশবিশেষ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যেও ছড়িয়ে আছে। এর রয়েল বেঙ্গল টাইগার পৃথিবীখ্যাত। রয়েছে মায়াবী চিত্রা হরিণ। পৃথিবীর বৃহত্তম বিষধর সাপ রাজগোখরো, নোনা পানির কুমির, বন্য শূকর, বানরসহ আরো অনেক প্রজাতির বন্য প্রাণী। এর বৃক্ষরাজিও অত্যন্ত বৈচিত্র্যপূর্ণ। বনের ভেতরে থাকা অসংখ্য খাল দিয়ে জোয়ারের সময় অবাধে নৌকায় ঘোরা যায়। এসব কারণে সারা দুনিয়ার প্রকৃতিপ্রেমীদের আকর্ষণের কেন্দ্রে রয়েছে এই বন। কিন্তু আমরা এর যথাযথ ব্যবহার তো দূরে থাক, সামান্যতম ব্যবহারও করতে পারছি না। এর একটি প্রধান কারণ ছিল চরম অবনতিশীল আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি। গত বৃহস্পতিবার বনের শেষ ছয়টি দস্যুদল আত্মসমর্পণের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত ঘোষণা করেছেন। এবার ইকোট্যুরিজমের উন্নত ব্যবস্থাপনা করা গেলে এই সুন্দরবন থেকেই বছরে বিলিয়ন ডলারের বেশি আয় করা সম্ভব বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।
বিশ্বে এখন পর্যটন খাতের আয় কয়েক ট্রিলিয়ন ডলার। আর প্রকৃতিভ্রমণ বা ইকোট্যুরিজমের আয় মোট পর্যটন আয়ের ৭ শতাংশের বেশি। সাধারণ পর্যটনের তুলনায় ইকোট্যুরিজমের আয়ের অনুপাত ক্রমেই বাড়ছে। সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশ যতটা সমৃদ্ধ ভারতের পশ্চিমবঙ্গের অংশ ততটা সমৃদ্ধ নয়। এর পরও শুধু উন্নত ব্যবস্থাপনার কারণে ভারত সুন্দরবন থেকে কোটি কোটি টাকা আয় করছে। তাহলে আমরা পারছি না কেন? পারছি না এ কারণে যে পর্যটনের জন্য সুন্দরবনে আমরা নূন্যতম অবকাঠামো সুবিধাও তৈরি করতে পারিনি। ব্যক্তিগত পর্যায়ের কিছু উদ্যোগ থাকলেও নিরাপত্তাজনিত কারণে তা এগোতে পারেনি। সেখানে দস্যুদের উৎপাত এতটাই বেড়ে গিয়েছিল যে পর্যটক তো দূরে থাক, সাধারণ জেলে, বাওয়ালি, মৌয়ালসহ সুন্দরবনভিত্তিক পেশাজীবীরাও বনে যেতে ভয় পেত। দস্যুদের আগেই চাঁদা দিয়ে টোকেন নিতে হতো পেশাজীবীদের। সুন্দরবন দস্যুমুক্ত হওয়ায় এখানে পর্যটনশিল্প এগিয়ে নেওয়ার এখনই উপযুক্ত সময়।
সুন্দরবনে আবার যাতে এ সমস্যা মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে সে জন্য দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। ভারতের সঙ্গে সুন্দরবনসংলগ্ন ৭৫ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে। সেখানে বিজিবির ফাঁড়ি রয়েছে মাত্র সাতটি। তাদের লোকবলও অনেক কম। দস্যু বা চোরাকারবারিদের তাড়া করার মতো দ্রুতগামী নৌযান প্রায় নেই বললেই চলে। কোস্ট গার্ডের সংখ্যাও সীমিত। বনরক্ষীর সংখ্যা আরো কম। এসব বাহিনীকে আরো সমৃদ্ধ করতে হবে। সুন্দরবন দস্যুমুক্ত করার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছে এলিট ফোর্স র‌্যাব। সুন্দরবনে পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য র‌্যাবের বেশ কিছু স্থায়ী ক্যাম্প তৈরি করা যেতে পারে। আমরা চাই, উন্নত ব্যবস্থাপনায় বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ সুন্দরবন বাংলাদেশকে নতুন পরিচিতি দিক।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!