সিলেট নগরীর জনজীবন বিপর্যস্ত
এফএনএস: সিলেট নগরীর অধিকাংশ এলাকা এখনও পানির নিচে। কোনো কোনো এলাকায় বুক সমান পানি। পুরো নগরীর জনজীবন বিপর্যস্ত। চরম কষ্টে আছে মানুষজন। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষ। প্রায় সব দোকানপাট বন্ধ। এতে করে বাড়ছে দুর্ভোগ। গতকাল রোববার সকাল থেকে বন্যা কবলিত এলাকা নগরীর উপশহর, তেররতন, যথরপুর, শেখেরঘাট, খালিঘাট, নাছিরপুর ও চরারপাড় ঘুরে দেখা গেছে বুক সমান পানি। বাড়িঘর পানির নিচে। রাস্তাঘাটের অবস্থাও একই। নৌকা চলছে সড়কে। এ ছাড়া ভ্যান, রিকশা কিংবা ঠেলাগাড়ি দিয়ে অতিপ্রয়োজনে বের হচ্ছে মানুষ। এরমধ্যে নগরজুড়ে আছে বৃষ্টি। মাঝখানে থামলেও গতকাল রোববার দুপুরে আবার শুরু হয়। এতে দুর্ভোগ আরও বেড়ে গেছে। নগরীর নিম্ন আয়ের মানুষজন খুব কষ্টে আছেন। আয়-রোজগার নেই। বাসস্থানের পাশাপাশি খাবার সংকটে পড়েছেন তারা। নগরীর বাণী মেটালিক স্টোরের সামনে কথা হয় রিকশাচালক মিলনের সঙ্গে। তিনি বলেন, তিন-চারদিন ধরে দিনে ১০০ টাকাও আয় করা যাচ্ছে না। পরিবার-পরিজন নিয়ে খুব কষ্টে আছি। পাশেই একটি চায়ের দোকান। দোকানি মনির মিয়া বলেন, পানির কারণে দোকান বন্ধ ছিল কয়দিন। আজ খুলেছি। কিন্তু ক্রেতা কম। সিলেট নগরীর তিনটি মূল প্রবেশপথে প্রায় বুক সমান পানি। এমনকি মূল নগরী এখনও বিচ্ছিন্ন। অধিকাংশ এলাকার বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন। কিছুকিছু এলাকা ঘুরে এ চিত্র দেখা যায়। শাহপরাণ বাইপাস সড়ক ঘুরে দেখা গেছে, সড়কটি পানিতে ডুবে গেছে। লোকজন জাল ফেলে মাছ ধরছে এই সড়কে। এ ছাড়া নগরীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকা হুমায়ুন রশিদ চত্বরও পানির নিচে।
সুরমার পানি কিছুটা কমেছে, বাড়ছে কুশিয়ারার পানি
সিলেটে ভয়াবহ বন্যার পর ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে পানি। গতকাল সুরমা নদীর সিলেট পয়েন্টে ২৫ সেন্টিমিটার পানি কমেছে। তবে, কুশিয়ারা নদীর পানি বাড়ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানিয়েছে, কুশিয়ারার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ এবং হবিগঞ্জের নবীগঞ্জের বেশকিছু এলাকা নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। এদিকে, সিলেটের সর্বোচ্চ চিকিৎসালয় এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পানি উঠে যাওয়ায় কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। আর, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের পর এবার ক্যাম্পাসে পানি উঠে যাওয়ায় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস ও পরীক্ষা। বন্ধ রয়েছে ট্রেন ও বিমান চলাচল।এদিকে, সুনামগঞ্জ তৃতীয় দিনের মতো এখনও বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন রয়েছে। সিলেটে শনিবার ছয় ঘণ্টা বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন থাকার পর পানি সরিয়ে পুনরায় বিদ্যুৎ সরবরাহ সচল করা হয়েছে। বানভাসি মানুষ উদ্ধারে তৎপর রয়েছে সেনাবাহিনী, বিমান বাহিনী, নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, বিজিবি, ফায়ার সার্ভিসসহ সরকারের বিভিন্ন সংস্থা ও সামাজিক সংগঠন। তবে, উদ্ধার অভিযানের জন্য পর্যাপ্ত জিনিসপত্র না থাকায় সময় লেগেছে বেশি। ভয়াবহ বন্যায় বানভাসি মানুষ সহায়তা না পাওয়ার অভিযোগ করছে। তবে, পর্যাপ্ত খাদ্য আছে, কিন্তু খাদ্য পৌঁছে দেওয়া যাচ্ছে না বলে দাবি জনপ্রতিনিধিদের।