সোশ্যাল মিডিয়া টার্গেট করে নির্বাহী আদেশে অনুমোদন দিলেন ট্রাম্প
বিদেশ : টুইটের সত্যতা যাচাই দ্বন্দ্বে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোকে টার্গেট করে একটি নির্বাহী আদেশে সই করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ নিয়ে বিরোধীদের সমালোচনা আর গুগল-ফেসবুকের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর তীব্র প্রতিক্রিয়া সত্ত্বেও ট্রাম্পের দাবি, ‘বাকস্বাধীনতাকে আমেরিকার ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর বিপদ থেকে রক্ষা করতেই’ এ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার এ আদেশে সইয়ের পর ওভাল অফিস থেকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, দসামাজিক যোগাযোগের কয়েকটি মাধ্যম একচেটিয়াভাবে যুক্তরাষ্ট্রের সব সরকারি-বেসরকারি যোগাযোগের বিস্তৃত অংশ নিয়ন্ত্রণ করে। সাধারণ নাগরিক এবং বৃহত্তর জনসাধারণের মধ্যে যেকোনও প্রকার যোগাযোগ সেন্সর, সীমাবদ্ধকরণ, সম্পাদনা, আকার পরিবর্তন, লুকানো, বদলে দেয়া, মূলত পরিবর্তন আনার অপরীক্ষিত ক্ষমতা রয়েছে তাদের হাতে।’
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওপর এ নির্বাহী আদেশ জারি নিয়ে বড় ধরনের ক্ষমতার পরীক্ষার মুখে পড়েছে হোয়াইট হাউস। ১৯৯৬ সালের এক জটিল আইনে দেশটিতে ওয়েবসাইট ও প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর সুরক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। নতুন আদেশে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সেই ক্ষমতা কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ট্রাম্প। তার এ সিদ্ধান্তে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছেন ডান ও বামপন্থী আইনজীবীরা।
তারা বলছেন, ‘এটি অসাংবিধানিক হতে পারে। কারণ এ আদেশে বেসরকারি সংস্থাগুলোর অধিকার আইনের প্রথম সংশোধনী লঙ্ঘনের ঝুঁকি রয়েছে এবং এটি সরকারের আরও দুটি শাখা অবরুদ্ধ করার চেষ্টা করেছে।’
ওরেগনের ডেমোক্রেট সিনেটর রন ওয়াইডেন বলেন, ‘কয়েক দশক আগে মীমাংসিত আইন নতুন করে লিখতে তিনি (ট্রাম্প) আদালত ও কংগ্রেসের ক্ষমতা নিজের জন্য চুরি করার চেষ্টা করছেন। নিজের স্বার্থে কীসের আইনি ভিত্তি আছে সেই সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন তিনি।’ এর আগে, গত মঙ্গলবার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দু’টি টুইটে ‘ফ্যাক্ট চেকিং’ লেবেল সেঁটে দেয় টুইটার কর্তৃপক্ষ।
এর একটি ছিল আলোচিত ‘মেইল ইন বক্স’ পদ্ধতি নিয়ে। যুক্তরাষ্ট্রে করোনার সংক্রমণ এড়াতে আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অধিকাংশ নাগরিক ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে চান না; সাম্প্রতিক এক জরিপে এমন তথ্য প্রকাশের পর এখন ‘মেইল ইন বক্স’ পদ্ধতি নিয়ে আগ্রহ বেড়েছে। এটার প্রয়োগ করা যায় কিনা তা নিয়েও আলোচনা চলছে দেশটিতে।
এ নিয়ে ট্রাম্প তার টুইটে লেখেন, ‘কোনো উপায় নেই (শূন্য!), মেইল-ইন ব্যালটগুলো ব্যাপক জালিয়াতির চেয়ে কম কিছু হবে না।’ ব্যালট ছিনতাই এবং জালভোট বাড়বে বলে দাবির পর ট্রাম্পের মন্তব্যকে রাজনৈতিক স্পর্শকাতর বিবেচনা করে তাতে প্রথমবার ‘ফ্যাক্ট চেক’ সিল যুক্ত করে টুইটার। সঙ্গে সঙ্গে এর কঠোর প্রতিক্রিয়া জানান ট্রাম্প।
টুইটারের বিরুদ্ধে তিনি আসন্ন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করারও অভিযোগ তুলেছেন। টুইটে ট্রাম্প বলেন, ‘টুইটার বাক স্বাধীনতার কণ্ঠরোধ করছে। প্রেসিডেন্ট হিসেবে আমি এটা হতে দেব না।’ তার টুইটে আবারও হস্তক্ষেপ করলে, অর্থাৎ সত্যতা যাচাই বন্ধ না করলে সরকারি ক্ষমতা ব্যবহার করে টুইটারের ক্ষমতার লাগাম টেনে ধরা, এমনকি প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করেও দিতে পারেন বলে হুঁশিয়ারি দেন এ রিপাবলিকান নেতা।
বৃহস্পতিবারের নির্বাহী আদেশে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্ল্যাটফর্মগুলোকে ‘অসামঞ্জস্যপূর্ণ, অযৌক্তিক এবং ভিত্তিহীন অন্যায্য সেন্সর’-এর দায়ে অভিযুক্ত করা হয়েছে। বিশেষ করে ‘নির্বাচিতভাবে’ ‘বিশেষ টুইট’-এ সতর্কবাণী প্রয়োগের ক্ষেত্রে টুইটারের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
এ আদেশে গুগলকে চীন সরকারকে জনগণের ওপর নজরদারিতে সহায়তা, টুইটারকে চীনা প্রোপাগান্ডা প্রচার এবং ফেসবুককে চীনা বিজ্ঞাপন থেকে লাভবান হওয়ার জন্যেও দোষী করা হয়েছে।
ফেসবুক ও গুগল ট্রাম্পের এ নির্বাহী আদেশের তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। তারা বলছে, এ ধরনের আদেশ ইন্টারনেট ও ডিজিটাল অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকারক।