হাসাপতালে রোগী নেয়া হয় বাঁশের মাঁচায়!
পবিত্র তালুকদার : পাবনার চাটমোহর উপজেলার হান্ডিয়াল ইউনিয়নের নবীণ গ্রামের সাবান আলী সরকার। প্রায় দুই সপ্তাহ আগে ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত হন তিনি। বিলবেষ্টিত এই গ্রামে আসা-যাওয়ার রাস্তা না থাকায় অসুস্থ সাবান আলীকে বাঁশের মাঁচায় নিয়ে প্রায় ৬ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে পাকা সড়কে আনার পর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হয়। এরমধ্যে তার শারীরিক অবস্থার আরো অবনতি ঘটে।
এর মাস দেড়েক আগে একই গ্রামের আরিফুল ইসলামের স্ত্রী আরজিনা খাতুন প্রসব বেদনা ওঠার পর হাসপাতালে নেয়া যায়নি। এরপর বাড়িতে জমজ সন্তান জন্ম দিলেও মারা যান প্রসূতি মা আরজিনা। তবে সাবান আলীকে বাঁশের মাঁচায় নিয়ে যাওয়ার করুণ দৃশ্য রাজু আহম্মেদ নামে এক যুবক ফেসবুক পোস্ট দেয়। মুহূর্তেই পোস্টটি ভাইরাল হয়ে উপজেলা জুড়ে সমালোচনার ঝড় শুরু হয়। ফেসবুক কমেন্টে-এ জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে স্থানীয় নেতাদের ধুয়ে নামান ফেসবুক ব্যবহারকারী।
সরেজমিন গিয়ে জানা যায়, উপজেলার শেষ প্রান্তের গ্রাম নবীণ। বিলবেষ্টিত এই গ্রামে যাওয়ার কোনো রাস্তা নেই। শুধু নবীণ গ্রামই নয়, এর আশেপাশে রয়েছে চরনবীণ, চর এনায়েতপুর, চর কাজিরপুর, মিলনচর, পাকপাড়া, বল্লভপুর, হোসেনপুর গ্রাম। ৫০ হাজারের অধিক মানুষের বসবাস এই কয়েকটি গ্রামে। বর্ষকালে নৌকা এবং শুকনো মৌসুমে জমির মধ্যে দিয়ে একমাত্র পায়ে হাঁটা মাটির রাস্তা গ্রামবাসীদের ভরসা।
অথচ কৃষি প্রধান এলাকা হিসেবে উপজেলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এসব গ্রাম। ধান, সরিষা, গম থেকে শুরু করে বেশিরভাগ কৃষিজাত পণ্য এই এলাকায় উৎপন্ন হয়ে থাকে। কেউ অসুস্থ হলে দুর্ভোগের শেষ থাকে না স্বজনদের। বিশেষ করে প্রসূতি মায়েদের কষ্ট হয় অনেক। একমাত্র বিদ্যুৎ সংযোগ ছাড়া কোনো উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি এসব গ্রামে। নেই কোনো হাট বাজার। গ্রামের যাতায়াত ব্যবস্থা দেখে কেউ ছেলে-মেয়ে বিয়ে দিতে চান না।
একমাত্র সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ছাড়া কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নেই। স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসায় পড়–য়া শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগের শেষ নেই। দূরের অন্য এলাকায় গিয়ে তারা বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হন। যানবাহন প্রবেশ না করায় কৃষকরা গ্রামে বসেই তাদের উৎপাদিত কৃষিপণ্য ফরিয়াদের কাছে বিক্রি করেন কম দামে। সংসদ নির্বাচন এবং ইউপি নির্বাচনের আগে জনপ্রতিনিধি বা নেতাদের দেখা মিললেও ভোটে জেতার পর দেখা মেলেনা বলে গ্রামবাসীদের অভিযোগ।
নবীণ গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তি আবদুল করিম বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে একবার বর্তমান এমপি সাহেব নবীণ গ্রামে এসে বলেছিলেন জিতলে রাস্তা তৈরি করে দেবো। তিনি ভোটে জিতেছেন ঠিকই কিন্তু হেরেছি আমরা! রাস্তাও হয়নি, আমাদের ভাগ্যের কোনো উন্নতিও হয়নি। রাজু আহম্মেদ নামে ওই ফেসবুক পোস্টদাতা যুগান্তরকে বলেন, আমরা কোন সমাজে বাস করছি? আমাদের কোনো অভিভাবক নেই! গ্রামে কেউ অসুস্থ হলে বাঁশের মাঁচায় করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য সম্ভবত বাংলাদেশে বিরল! সামগ্রিকভাবে দেশের উন্নয়ন হলেও আমরা পিছিয়ে রয়েছি।
হান্ডিয়াল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কে,এম, জাকির হোসেন বলেন, গ্রামগুলো বন্যাকবলিত। আসলেই ওইসব এলাকার মানুষ খুব কষ্টে থাকে। বাংলাদেশে সম্ভবত এমন গ্রাম খুঁজে পাওয়া যাবে না। সড়ক নির্মাণের জন্য আমি বহুবার বিভিন্ন দপ্তরে যোগাযোগ করেছি। এখন পর্যন্ত কোনো আশানুরুপ ফল মেলেনি বলে জানান তিনি।
Spread the love