২৩% গার্মেন্টস কারখানা এখনো পূর্ণাঙ্গ নিরাপদ নয়

অর্থনীতি: রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর প্রায় ছয় বছর পার হতে চলেছে। এই সময়ে গার্মেন্টস কারখানায় শ্রমিকের নিরাপত্তায় নানামুখী উদ্যোগ বাস্তবায়ন হলেও তাতে কাক্সিক্ষত ফল মেলেনি। শ্রম মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের (ডিআইএফই) হিসাব অনুযায়ী, এখনো অন্তত ২৩ শতাংশ কারখানা ভবনের কাঠামো ত্রুটিমুক্ত হয়নি। অর্থাৎ এই কারখানা ভবন এখনো শ্রমিকের জন্য পুরোপুরি নিরাপদ নয়।
ডিআইএফই ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ১ হাজার ৫৫০টি গার্মেন্টস কারখানার কর্মপরিবেশের ওপর জরিপ চালিয়ে এ তথ্য পেয়েছে। এ ছাড়া কারখানার অগ্নিপ্রতিরোধ ও বৈদ্যুতিক নিরাপত্তা ব্যবস্থায়ও পূর্ণাঙ্গ অগ্রগতি হয়নি। আলোচ্য সময়ে বৈদ্যুতিক নিরাপত্তায় ত্রুটি রয়েছে ২৮ শতাংশ কারখানার আর অগ্নিনিরাপত্তা সংক্রান্ত ত্রুটি রয়েছে ১৩ শতাংশ কারখানায়। শ্রম মন্ত্রণালয়সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। ডিআইএফই জরিপ চালানো কারখানাগুলোর মধ্যে তৈরি পোশাক কারখানা মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র সদস্যভুক্ত কারখানা ১ হাজার ৭১টি, বিকেএমইএ’র সদস্যভুক্ত ৪২৬টি ও কোনো সংগঠনের সদস্য নয়, এমন কারখানা ৫৩টি। ডিআইএফই’র প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা গেছে, কারখানার নিরাপত্তা ব্যবস্থার অগ্রগতিতে সবচেয়ে পিছিয়ে রয়েছে বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ’র সদস্য বহির্ভূত কারখানাগুলো। এধরনের কারখানার মধ্যে নিরাপত্তা ব্যবস্থার মানদ-ে এখনো প্রায় অর্ধেক কারখানায় ত্রুটি রয়ে গেছে।
ডিআইএফই’র হিসাবে, বিজিএমইএভুক্ত কারখানা ভবনের কাঠামোগত নিরাপত্তায় ৭৯ শতাংশ কারখানা নিরাপদ। আর বিকেএমইএভুক্ত কারখানায় এই হার ৭৪ শতাংশ। এ ছাড়া দুটি সংগঠনের সদস্যভুক্ত কারখানার অগ্নিপ্রতিরোধ সংক্রান্ত নিরাপত্তায় অগ্রগতি হয়েছে ৮৮ শতাংশ। আর বৈদ্যুতিক নিরাপত্তা ব্যবস্থায় সংস্কারে অগ্রগতি হয়েছে যথাক্রমে ৭২ শতাংশ ও ৭৫ শতাংশ। অর্থাৎ বাদবাকি কারখানাগুলো অগ্নি ও বৈদ্যুতিক ক্ষেত্রে পূর্ণাঙ্গ নিরাপদ নয়।
অবশ্য বিজিএমইএ’র দাবি, সংগঠনটির সদস্যভুক্ত সব কারখানা ভবনের কাঠামো শতভাগ নিরাপদ। বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান ইত্তেফাককে বলেন, বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ’র সদস্যভুক্ত কোনো কারখানা ভবনের কাঠামো এখন অনিরাপদ নয়। বরং এ ক্ষেত্রে ডিআইএফই’র মূল্যায়নের মানদ- নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, তাদের এ মূল্যায়নের ভিত্তি কী? বিজিএমইএ’র পক্ষ থেকেও প্রতি বছর সংগঠনটির সদস্যভুক্ত কারখানাগুলোর কমপ্লায়েন্সের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হয়। গত বছর এরকম ৪ হাজার ৫৪টি কারখানা পরিদর্শন করে তৈরি করা প্রতিবেদনে বলা হয়, কারখানা ভবনের কাঠামো, অগ্নি ও বৈদ্যুতিক নিরাপত্তার বিবেচনায় কারখানাগুলো শতভাগ নিরাপদ।
ডিআইএফই’র একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ইত্তেফাককে বলেন, সংস্কারে পিছিয়ে থাকা কারখানাগুলোকে ইতোমধ্যে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ’র সদস্যভুক্ত যেসব কারখানা সংস্কারে অনেক পিছিয়ে রয়েছে, তাদের ইউডি সেবা (ইউটিলিটি ডিক্লারেশন বা কাঁচামাল আমদানির প্রাপ্যতা) বন্ধ রাখার জন্য সংগঠন দুটিকে চিঠি পাঠিয়েছি। কোনো কোনো কারখানার ক্ষেত্রে লাইসেন্স নবায়ন স্থগিত রাখার জন্যও স্থানীয় প্রশাসনকে চিঠি পাঠানো হয়েছে।২০১৩ সালে সাভারে রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের গার্মেন্টস কারখানাগুলোর নিরাপত্তামানের দুর্বলতা নিয়ে বিশ্বব্যাপী ব্যাপক আলোচনা তৈরি হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ইউরোপ ও আমেরিকাভিত্তিক ক্রেতাদের সমন্বয়ে অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্স নামে দুটি জোট তাদের পণ্য সরবরাহকারী কারখানা পরীক্ষা ও সংস্কার দেখভালের উদ্যোগ নেয়। ওই দুটি জোটের আওতাধীন প্রায় ২ হাজার ২শ’ কারখানা গত সাড়ে পাঁচ বছরে ৯০ শতাংশের উপরে নিরাপত্তা ত্রুটির সংস্কারকাজ সম্পন্ন করেছে। এ দুটি জোটের বাইরে থাকা আরও দেড় হাজার কারখানা সংস্কারের উদ্যোগ নেয় সরকার।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!